রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রায়ই পানিতে মিলছে মরদেহ। পুলিশের তথ্য বলছে, গত আট বছরে এ ঝিল থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ২৭টির বেশি। এজন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওপর দায় চাপালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশও এড়াতে পারে না এ দায়।
হাতিরঝিলের একপাশে সড়ক, অন্যপাশে ঝিল। মাঝখানে ওয়াকিংওয়ে। দিনের আলোয় সবুজের সমারোহই যেন রাতে নগরবাসীর জন্য আতঙ্ক। খানিক অংশে হালকা আলো থাকলেও সিংহভাগ অংশই থাকে অন্ধকারে, যার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
বছর কয়েক আগে গভীর রাতে হাতিরঝিল হয়ে বাড়ি ফেরার সময় রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন এক সিএনজি অটোরিকশাচালক। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চালক সময় সংবাদকে বলেন, ‘দুইটা লোক একটি বস্তা টেনে নিয়ে ফেলতে দেখেছি। বস্তাটা অনেক ভারী মনে হয়েছিল। ভয়ে সামনে যাইনি।’
আর চোখের সামনে অনেক কিছুই দেখেছেন শাহ আলম নামে এ সিএনজি অটোরিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘অনেকবার দেখেছি, রাতে মাইক্রোবাসে করে এনে ঝিলে বস্তা ফেলা হয়।’
রাত যতই বাড়ে ততই ফাঁকা হতে শুরু করে হাতিরঝিল। সড়ক বাতিগুলোও যেন এক প্রকার অকার্যকর। আর ওয়াকিংওয়েগুলো যেন এক অন্ধকার জগৎ!
স্থানীয়রা বলছেন, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় হাতিরঝিল অনেক নিরাপদ ছিল। কিন্তু এখন অনেক অনিরাপদ হয়ে ওঠেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রায়শ। এছাড়া বিভিন্ন সময় দেখা যায়, পলিথিনে পেঁচানো নবজাতকও ঝিলে ফেলা হয়।
হাতিরঝিল এবং বাড্ডা থানার পরিসংখ্যান বলছে, গত ৮ বছরে এ ঝিল থেকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ২৭টির বেশি। আর গত ৮ মাসেই উদ্ধার করা মরদেহর সংখ্যা ৮টি। সব মিলিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, এ যেন মরদেহের ডাম্পিং স্টেশন হয়ে ওঠেছে!
হাতিরঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ক্যামেরাগুলো অনেক ওপরে লাগানো। এর ফলে জুম করলেও অনেক কিছু স্পষ্ট বুঝার উপায় থাকে না।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে রাজউক কর্তৃপক্ষের আশ্বাস আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের। সংস্থাটির সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে কোথাও ক্যামেরা স্থাপন করলে ভালো হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।