সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, নিষ্পাপ মুখের অটিস্টিক কিশোর হারুনের অবস্থা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। অথচ এ আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তার বাবা।
জানা গেছে, জন্মের তিন মাসের মধ্যে ধরা পড়ে হারুন আর দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিক নয়। সেই থেকে যুদ্ধটা শুরু পরিবারের। কয়েক বছর বাদে লড়াইটা আরও কঠিন করে তোলে হারুনের মুখের টিউমার।
হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি হারুনের অস্ত্রোপচারের অনুমতি। অটিস্টিক বলে ছুরি-কাঁচির নিচে নিতে সাহস করেননি অনেক চিকিৎসক। এদিকে দিনে দিনে টিউমার ছড়িয়ে পড়ে তার মুখের নিচের চোয়ালের পুরোটা জুড়ে। চার দফা অপারেশনের তারিখ পেয়েও তা ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) গড়ায়নি। তাই যে কোনো শর্তেই অপারেশনে রাজি ছিল হারুনের পরিবার।
হারুনের বাবা বলেন, ‘অপারেশন হবে হবে একটা ভাব ছিল, কিন্তু অপারেশনগুলো হয়নি। অটিজমের কারণে ডাক্তাররা সাহস পাচ্ছিলেন না। কারণ সামালটা কে দেবেন? তখন আমি বলেছি স্যার আপনি করেন, আমি আপনাদের সাথে আছি। ছেলে যদি বেঁচে থাকে আলহামদুলিল্লাহ, মরে গেলেও আলহামদুলিল্লাহ।’
এর পরেই শুরু হয় অপারেশনের প্রস্তুতি। তবে গল্পটা এক রকম অবিশ্বাস্য। পুরো চোয়াল প্রতিস্থাপনে এমন নজির নেই আগে। আবার পায়ের হাড়ের দৈর্ঘ্য আর চার টুকরো করে চোয়ালে প্রয়োজনীয় হাড়ের দৈর্ঘ্য মেলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন হাড় প্রতিস্থাপনে নার্ভ সচল থাকে কি না, সেটাও ভাবিয়েছে চিকিৎসকদের। আর মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিশুটি চিকিৎসায় কতটা সহায়তা করে, ছিল সেই ভাবনাও। সব মিলিয়ে প্রায় অসাধ্য সাধন হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।
অপারেশনে নেতৃত্ব দেয়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নিতীশ কৃষ্ণ দাস বলেন, অটিস্টিক পেশেন্ট হওয়ায় অপারেশনটা ছিল খুবই জটিল, কোনো ধরনের ভুল হওয়ার সুযোগ ছিল না। আমরা যে পায়ের হাড়টা নিই, সেই পায়ের রক্তনালিটাও নিই। এর পর টুকরো টুকরো করে পেশেন্টের চোয়ালে শেপ করে লাগাই। এর পর রক্তনালির সঙ্গে রক্তনালির জোড়া দিই। তবে শেফ করাটা অত্যন্ত জটিল এবং সেনসেটিভ কাজ। এটা আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একইসঙ্গে আমি এটাকে একটা অপরচুনিটিও মনে করেছি।’
এখন নরম খাবার খেতে পারছে হারুন। ধকল কাটিয়ে উঠলে নিচের পাটিতে কৃত্রিম দাঁত সংযোজন করা হবে বলেও জানান চিকিৎসক।