বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
ময়মনসিংহের সাংবাদিকদের দাবী আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের আহবান – সংস্কার কমিটি ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অভিযানে ইং ০৪/০২/২০২৫ তারিখ গত ২৪ ঘন্টায় দুর্নীতির আতুর ঘর তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, অবশেষে সাব রেজিস্ট্রার বদলি র‍্যাব -১৪, সিপিএসসি ময়মনসিংহ‘র বিশেষ অভিযানে ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী থানা এলাকা হতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভারতীয় কম্বল‘সহ ০১(এক) টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ। ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অভিযানে ইং ০১/০২/২০২৫ তারিখ গ্রেফতার ০৫ জন। বাতি জ্বালিয়েও ফ্যাসিস্ট আ.লীগকে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা এখন হাসির খোরাক : ওয়াহাব আকন্দ ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অভিযানে ইং ৩০/০১/২০২৫ তারিখ গ্রেফতার ০৭ জন। জেলা গোয়েন্দা শাখা, ময়মনসিংহ এর অভিযানে ১৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার ০৪ জন। বাকৃবির ষষ্ঠ আন্তঃঅনুষদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব- বাকৃবি ভিসি

দুর্নীতির আতুর ঘর তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, অবশেষে সাব রেজিস্ট্রার বদলি

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৮ টাইম ভিউ :
দুর্নীতির আতুর ঘর তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, অবশেষে সাব রেজিস্ট্রার বদলি
দুর্নীতির আতুর ঘর তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, অবশেষে সাব রেজিস্ট্রার বদলি

অভিযোগ উঠেছে, নিজের মন গড়া আইন অনুযায়ী দলিল রেজিষ্ট্রেশন করেন তারাকন্দা সাব রেজিস্ট্রার,বিকেল ৩ টার পর দলিল রেজিষ্ট্রেশন করেন না তিনি, যদি কোন দলিল লেখক ৩টার পর দলিল লিখে নিয়ে যায় তাহলে ওই দলিল লেখককে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়। সাব রেজিস্ট্রারের এমন মন গড়া আইন তৈরির কারণে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। সাসপেন্ডের ভয়ে কোন দলিল লেখক মুখ খুলতে রাজি নন।

ময়মনসিংহের তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেট হওয়ার পর সকল ধরনের অবৈধ লেনদেনগুলো হয়ে থাকে সমিতির মাধ্যমে। এছাড়া দাতাগ্রহিতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারণে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দলিলে লিখিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা বিক্রিতার পক্ষে কালো টাকায় পরিণত হয়। একইভাবে ক্রেতার কালো টাকাও সাদা হয়ে যায়। এতে করেই ত্রিমুখী দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে দলিল রেজিস্ট্রেশনের সাথে সাব রেজিস্ট্রারসহ কর্মচারীরা অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। সেবাগ্রহিতারা দালালের খপ্পরে পড়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হন।

‘দুর্নীতিমুক্ত’ অফিসে ঘুষই শেষ কথা’ তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে টেবিলে টাকা ফেললে যেভাবে চাইবেন, সবকিছু মিলবে সেভাবে। ওপর মহলের ছায়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। নামজারি, খতিয়ান, ডিসিআর, খাজনার রসিদ কিংবা ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র সবই যেন তাদের ‘হাতের মোয়া’।

কেউ জমি নিবন্ধন করতে এলে সরকার নির্ধারিত ফির বদলে নির্ধারিত টাকার ছক ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর নানা বাহানায় আদায় করা হয় টাকা। বছরের পর বছর চলছে এভাবেই। বেশ কিছুদিন এ সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ঘুরে পাওয়া গেছে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা।

দলিল নিবন্ধনে দুর্নীতি প্রসঙ্গে নাগরিক নেতারা বলছেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অসহায় মানুষের টুঁটি চেপে ধরে দুর্নীতি করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও নানা অজুহাতে প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকার বেশি ঘুষ আদায় হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসব দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরি। তবে কাঁচা টাকার গন্ধ ছাড়তে পারেন না কিছু অসাধু কর্মকর্তা।’

যেভাবে ঘুষ আদায়
দলিল লেখক সমিতির একাধিক নেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারাকান্দা রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে প্রতি মাসে ২৫০ থেকে ৩০০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। সেই হিসাবে বছরে গড়ে ২২০ কার্যদিবস ধরা হলেও রেজিস্ট্রি দলিলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ হাজারের বেশি। অন্য দলিলে নির্দিষ্ট অঙ্কের (প্রতি লাখে ১ হাজার) টাকা ঘুষ নেওয়া হলেও বেশি টাকা গুনতে হয় দানপত্র ঘোষণা, ভুল সংশোধন, বণ্টননামা, অসিয়তনামা ও আমমোক্তারনামায়। এখানে ঘুষের হার প্রতিটিতে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। সাধারণত সম্পত্তির ভোগদখল, রক্ষণাবেক্ষণ, কেনাবেচার জন্য কাউকে ক্ষমতা অর্পণের জন্য আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) করা হয়।

সরেজমিন যা দেখা গেল, তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক ও সেবা নিতে আসা ব্যক্তির বাইরেও অনেক মানুষের জটলা। অফিস চত্বরে ঘুরতে থাকা বেশির ভাগ লোকই দালাল চক্রের সদস্য। তারা কম টাকায় দলিল নিবন্ধন করে দেওয়ার কথা বলে পছন্দের দলিল লেখকের কাছে ‘মক্কেল’ ধরে আনে। বিনিময়ে পায় কমিশন।

তবে একাধিক দলিল লেখক জানান, সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কথা বললে সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাত দেখান। আর শুধু জমি রেজিস্ট্রি নয়, দানপত্র, বণ্টনপত্র, ঘোষণাপত্র, অংশনামা ও চুক্তিপত্রের মতো দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ গুণ টাকা দিতে হচ্ছে দাতাগ্রহীতাদের। দলিলের নকল (অনুলিপি) সংগ্রহ করতেও সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ১ থেকে দেড় হাজার টাকা।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা পেনশনের টাকায় তাঁর অসুস্থ স্ত্রীর নামে ১০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করতে সম্প্রতি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যান। এ কাজের জন্যও মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন । অনুরোধ করার পরও ঘুষের টাকা ছাড় দিতে রাজি হননি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতি।

১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনে দেশে ভূমি হস্তান্তর দলিলের নিবন্ধন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে সাব রেজিস্ট্রার আইন অনুযায়ী ভূমি নিবন্ধনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যার জন্য রয়েছে তার নিজস্ব দপ্তর। জনগুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তর নিয়ে ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক’ এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। আলোচিত গবেষণাটিতে তুলে ধরা হয়েছে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বাস্তব চিত্র, যেখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করাতে পারেন না সেবাগ্রহীতারা।

দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা ও জালিয়াতি, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, স্থানীয় রাজনৈতিক ও নানাবিধ প্রভাব বিস্তার, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি নানা কৌশলের ফাঁদে ফেলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার মতো সুস্পষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে।

মাঠ পর্যায়ে যার স্বাক্ষ্য দিচ্ছে দুর্নীতির আতুর ঘর খ্যাত তারাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ কতিপয় দালালদের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কালো থাবায় পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই উপজেলার সাধারণ মানুষদের। এদের সাথে মানুষ হয়রানীতে আরও যোগ হয়েছে অসাধু কিছু দলিল লেখক ও সমিতি নামে এক সংঘটন।

ঘুষ আদায়ে রেস্টুরেন্টের মতো ম্যানু কার্ট!
ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকারি ফির বাইরেও জমির মূল্যের দশমিক ৫ শতাংশ ( প্রতি লাখে ৫%) অর্থ দিতে হবে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় দলিল সমিতিকে। অর্থাৎ জমির মূল্য ১ কোটি টাকা হলে সমিতির জন্য নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। একইভাবে অন্যান্য সেবাখাতেও দিতে হয় কমিশন, আছে সেবা অনুযায়ী নির্ধারিত অংক! অনেকটা রেস্টুরেন্টের ম্যানু কার্টের মতো অদৃশ্য এই অনৈতিক অর্থ আদায়ের তালিকা পরিণত হয়েছে নিজস্ব নিয়মে।

এ ব্যাপারে মাছুদ আর পলাশ বড়ুয়া নামে একজন বলেছেন, তারাকান্দা সাব-রেজিস্টার অফিস কেন্দ্রিক দালালের দৌরাত্ম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। তাদের মাধ্যমে সরকারি নির্ধারিত ফি’র বাইরেও ক্ষেত্র বিশেষে ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ গুণতে হয়। এসব নিরসন এখন সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। একই ধরণের কথা বলেছেন, রত্নাপালং এর বেলাল ও শিমুল কান্তিসহ বেশ কয়েকজন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর


All rights © 2024 ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Esaitbd Soft Lab- UAE/BD