সিলেট সীমান্ত এলাকা এখন চোরাইপণ্যর নিরাপদ রোড। সীমান্তের পর চোরাকারবারিদের দুটি বিশাল ঘাটি রয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর সদর উপজেলার বটেশ্বর বাজারে। আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ এড়াতে চোরাকারবারীদের কাছে নিরাপদ ঘাটি হচ্ছে সেনা অধ্যুসিত বটেশ্বর বাজারসহ এর আশেপাশের এলাকা। বিগত সরকারে শাসন আমলে যারা এসব চোরাকাবারের সাথে জড়িত ছিলো তাদের অনেকে আত্মগোপনে চলে গেলেও বিএনপির অঙ্গসঙ্গঠনের নামে কতিপয় কিছু ব্যক্তি এখন চোরাচালানের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। যদিও বিএনপি কেন্দ্র সহ জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন কোন অপরাধের সাথে দলীয় কোন নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এসব ঘোষনা দিয়েও বিগত সরকারে শাসন আমলে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেনা দেশের শীর্ষ এ রাজনৈতিক দলটি। ব্যক্তির অপরাধের দায় দল নিবেনা এমন ঘোষনার পর আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে অপরাধী যে দলের হউক তাকে কোন ছাড় না দিতে। সম্প্রতি গতকাল শুক্রবার সিলেট সদর উপজেলার খাদিপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বটেশ্বরবাজারের পান্না মার্কেটের তামাম বস্ত্রালয় নামের একটি দোকানের পিছনের গুদামে ভারতীয় চিনির বস্তা পরিবর্তন করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় শাহপরাণ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই মিজানুর রহমানসহ পুলিশের একটি দল। অভিযানে তারা বটেশ্বর বাজারের ঐ গুদাম থেকে ৫০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্ধ করে। পাশাপাশি চিনির গুদামের মালিক সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রুফিয়ান আহমদ সবুজ উরফে সাদ্দামের ভাই কানুগুল গ্রামের মৃত আতিব মিয়া ছেলে সুফিয়ানকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী অভিযানে ভাই আাটকের খবর পেয়ে সেখানে উপস্তিতহন সুফিয়ানের ছাত্রদলের সদস্য সচিব রুফিয়ান আহমদ সবুজ উরফে সাদ্দাম, করিম, রিয়াজ ও এনামুলসহ ১৫/২০ জনের একটি সঙ্গবদ্ধ একটি দল। সেখানে এসেই তারা নিজের বিএনপির অঙ্গসঙ্গ গঠনের নেতা পরিচয়ে অভিযানকারী পুলিশের দলকে এক রকম অবরোদ্ধ করে পুলিশের হাতে আটক সুফিয়ানকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। অপরদিকে ভারতীয় চিনির গুদামে অভিযানে পুলিশ আটক, এমন খবরে নড়েচেড়ে বসে এসএমপি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত ফোর্সসহ বটেশ্বর বাজারে যায় পুলিশের আরেকটি অভিযানিকদল, তাদের সাথে যোগ দেয় র্যাবের একটি টহলটিম। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বটেশ্বর বাজারে অভিযান চালিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশের সেই টিমকে উদ্ধারসহ আটককৃত ৫০ বস্তা চিনি নিয়ে শাহপরাণ থানায় আসা হয়।
এ ঘটনার পর রাতেই ডিসি দক্ষিণ মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে নামে পুলিশের আরেকটি অভিযানিক দল। সাড়াসি অভিযানের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মৃত আতিব মিয়ার ছেলে সুফিয়ান, জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল খান চাবাগানের বাসিন্দা অনন্ত রায়ের ছেলে অঞ্জন রায় ও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার বড় মাকুয়া গ্রামের মুনাই মিয়ার ছেলে ( বটেশ্বর মনাই টিলার বাসিন্ধা) কলিম উদ্দিনসহ তিন চোরাকারবারিকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। পরে এ ঘটনায় থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইন একটি মামলা দায়ের করা হয়। যাহার মামলা নং-৩৪/২০২৪ইং। তবে রহস্যজনক কারণে বটেশ্বর বাজারের সেই নাটকীয় ঘটনায় জড়িত কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেনি পুলিশ। এদিকে বিএনপির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের চাপের কারণে পুলিশের অভিযানকারি দলের কাছে উল্লেখিত এই তিন আসামীকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহপরাণ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, বটেশ্বর বাজারের পান্না মার্কেটের একটি গুদামে ভারতীয় চিনির বস্তা বদল করে বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। গোপন খবর পেয়ে শাহপরাণ মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ একটি টিম অভিযান চালিয়ে ৫০ বস্তা চিনিসহ সুফিয়ান নামের এক চোরাকারবারিকে আটক করে। পরে সেখানে কিছু কতিপয় ব্যক্তি উপস্তিত হয়ে পুলিশের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে সেখান সঙ্গবদ্ধ চক্রটি পালিয়ে যায়। রাতেই ডিসি দক্ষিণ স্যারের নেতৃত্বে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে চোরাচালানের সাথে জড়িত আরো দুজন চোরাকারবারিকে আটক করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরসহ আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে ভারতীয় সীমান্ত থেকে সিলেটসহ সারাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাইপন্য, চিনি, কসমেটিক্সসহ মাদক দ্রব্য। গত ৫ আগষ্ট সরকার পরবিবর্তন হলে চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কিছু কতিপয় নেতার হাতে। হরিপুর বাজার বা সীমান্ত এলাকা থেকে বটেশ্বর বাজারে চোরাই চিনি আসার পর নির্দিষ্ট গুদামে এসব চিনি স্টক করে রাখা হয়। কখনো কখনো এসব চিনির প্যাকেট ও বদল করা হয় এসব গুদামে। বটেশ্বর এলাকাটি জেলা ও এসএমপির সদর ও জৈন্তাপুর সীমান্ত হওয়ায় সহজে এসব চোরাকারবারীরা তাদের পন্য গুদামে নিয়ে আসতে পারে। এসব গুদাম থেকে সুযোগ বুঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। পাচারকাজে নেতৃত্ব দেন সবুজ নামের স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা। বিগত সরকারে আমল থেকে সরাসরি চোরাচালানের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি। স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এমনটি জানান। শনিবার সকালে, সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বটেশ্বর বাজারসহ আশে পাশের এলাকায় ৪/৫টি ভারতীয় চিনির গুদাম রয়েছে। বটেশ্বর গৈলাপাড়া মসজিদের বিপরীতে একটি ভবনের নিচ তলায় রয়েছে ভারতীয় চিনির একটি বিশাল গুদাম। বটেশ্বর পুরানবাজারের রেশনের গলিতে রয়েছে একাধিক চোরাই চিনির গুদাম। বটেশ্বর এমআর হাইজিংয়ে দুটি গুদাম রয়েছে। একটি গুদামের মালিক খাটিমারা গ্রামের এনামুল ও রিয়াজ। বাইপাস এলাকায় রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা হাসানের একাধিক গুদাম। শিল্পনগরী বিসিক এলাকায় রয়েছে আরো কয়েকটি ভারতীয় চোরাই চিনির গুদাম। পিরের বাজারের একটি মার্কেটে রয়েছে সবুজের আরেকটি চিনির গুদাম। মামার দোকানের কাছে রয়েছে আরেকটি ভারতীয় চিনির গুদাম। এসব গুদামের চোরাই চিনি সারাদেশে পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে সবুজ নামের ঐ রাজনৈতিক নেতা। তবে সরেজমিনে গিয়ে সবুজের বক্তব্য নিতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।