তারিখ: ১৮ মে, ২০২৪
প্রিয় দেশবাসী,
আস্সালামুআলাইকুম। বর্তমানে বাংলাদেশের একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ এবং ১৯৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহকারী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতির প্রতি আমার কিছু কর্তব্য রয়েছে। কোন কারণে যদি আমি আমার দায়িত্বগুলি সঠিকভাবে পালন না করি তার জন্য আমাকে সমগ্র জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং আমার সেই কর্তব্যবোধ থেকে আমি আপনাদেরকে বাংলাদেশের কিছু বিষয়াবলী সম্বন্ধে অবহিত করতে চাই। তার মধ্যে সর্ব প্রথম হল-
১। আইনের শাসন : বিগত ১৫ বৎসর যাবৎ বাংলাদেশে আইনের শাসন নাই বললেই চলে। কারণ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইন আদালতগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে পরিচালনা করছে। আইনের প্রয়োগ হচ্ছে অন্যায়ভাবে, শুধু বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হয়রানি ও মিথ্যা এবং সাজানো মামলার মাধ্যমে, শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য। অথচ দেশকে সঠিক পথে এবং উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সমাজে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য, সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছে এবং সর্বসাধারণের উপর জোর জুলুম নির্যাতন ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। সমাজে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশে কখনও শান্তি ফিরে আসবে না, মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হবে না। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, আইনের শাসন।
২। অর্থনীতি : বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যেকোন সময় ব্যাপক ধ্বস নামতে পারে। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার কারণে কৃষকের মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নদী নালা শুকিয়ে গেছে, পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগ বিস্তার লাভ করছে। বর্তমান অবস্থায় দেশের হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জায়গা দেওয়ার মত অবস্থা নাই। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও জনগণ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও বৎসরে ১ কোটি ৩৩ লাখ টন কার্বন বাতাসে মিশছে। এইগুলি প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নাই। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীগুলি সঠিকভাবে প্রবাহিত হলে এবং নতুন নতুন বন জঙ্গল সৃষ্টি করা হলে কার্বনের প্রভাব অনেকাংশে হ্রাস পেত। বর্তমানে রপ্তানী আয় হ্রাস পেয়েছে, আমদানী সংকোচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশে লুটতরাজের কারণে প্রবাসীরা রেমিটেন্সের টাকা পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯.৬ বিলিয়ন ডলার। আসল পরিশোধের কথা দূরে থাক, এমনকি সুদের টাকা পরিশোধ করার অবস্থাও বর্তমান সরকারের নাই। পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের খাতে বকেয়া পড়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তারা ডলারের সংকটের কারণে তাদের লাভের টাকা নিজ দেশে ফেরৎ নিতে পারছে না। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশী ঋণ পরিশোধ করার চাপ রয়েছে। এই ঋণ এবং ঋণ বাবদ সুদসহ নির্দিষ্ট সময় শেষে পরিশোধ করতে হবে। যা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় সম্ভব নয়। অন্যদিকে এর প্রভাব বিভিন্ন প্রকল্পের উপরও পড়েছে। যার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি এবং বাজেট বাস্তবায়ন ৪০ শতাশের নীচে। বর্তমান সরকার অনেকগুলি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। কিছু কিছু প্রকল্প এখনও চলমান আছে এবং কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পের ব্যয় পার্শ্ববর্তী ভারতের তুলনায় ৩-৫গুণ বেশি। অনেকের ধারণা জনগণের এই অর্থগুলি আত্মসাৎ করা হয়েছে। ডলার সংকট এবং অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য এই মেগা প্রকল্পগুলি অনেকাংশে দায়ী। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশংকাজনক হারে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশীয় মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। খুব শীঘ্রই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন পথ খোলা নাই। কারণ নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্র সংকোচিত হয়েছে। কারণ তারা আমাদের বর্তমান অর্থনীতির উপর আস্থা রাখতে পারছে না। তদুপরি ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, অন্যদিকে বিদ্যুতের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দিন দিন উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কোন নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ নাই। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলেছে। বাহির হওয়ার দরজাও বন্ধ। ৫ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে, কৃষকদেরকে জেলে দেওয়া হয়। অথচ লক্ষ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি করলে বা বিদেশে পাচার করলে তার কোন শাস্তি হয় না। কারণ সরকারই তাদের পৃষ্ঠপোষক। দেশে মূল্যস্ফিতি ১০ শতাংশের উপরে। বিশেষভাবে খাদ্য দ্রব্যের উপর মূল্যস্ফিতি ১৫ শতাংশের উপরে। তাহলে সাধারণ মানুষ কি খেয়ে বেঁচে থাকবে।
বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর যাবৎ বাকশালি কায়দায় দেশ শাসন করছে। আল্লাহ্র ওয়াস্তে এখন ক্ষান্ত হন। জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেন। আমি না থাকলে দেশ চলবে না এই ধরণের ভ্রান্ত ধরণা থেকে বের হয়ে যান। আল্লাহ্র উপর ভরসা করেন। বর্তমানে দেশের সর্বত্র জুঁয়া এবং হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। এইগুলি বন্ধ করার দায়িত্ব কার। মাঝে মাঝে গ্রামে গঞ্জে স্লোগান শুনা যায়, “জয় বাংলা- গরম সামলা”। “বর্তমান সরকারের উন্নতি, ঘরে ঘরে সন্ধ্যায় মোম বাতি”। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি, গত ২ বছরে টাকার মান কমেছে ৩৮-৫১ শতাংশ। সুদের হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৪.৫৫ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে টাকার প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে এবং ব্যাংকগুলিতে টাকার হিসাবে গড়মিল দেখা দিয়েছে। আর্থিক খাতে বাংলাদেশ রেড জোনে প্রবেশ করেছে। সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি খুবই বড়। ভুঁয়া দলিল এবং সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নেওয়া এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম সাবেক মন্ত্রী, আমলা এবং ঋণ খেলাপি এবং ১/১১ এর সাবেক সেনা কর্মকর্তারা দুবাই-য়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার ঘাঁটি বানিয়েছে। ৩৯৪ জনের সম্পদের পাহাড় ২,৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬৬১টি সম্পত্তির লিস্ট পাওয়া গেছে। এছাড়াও লন্ডন, কানাডা এবং আমেরিকায় লক্ষ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই ধরণের কর্মকন্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। কারণ তারা সরকারের বিভিন্ন অপকর্মে সাহায্য সহযোগিতা করে। তাদের কোন জবাবদিহি করতে হয় না। তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলাও হয় না। ফলে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচনের সময় নিশিরাতের জাল ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেছে। রাতারাতি তারা এত বিশাল অংকের টাকা কোথায় পেল, এত সম্পদ কিভাবে ক্রয় করেছে, তার কোন ব্যবস্থা দুদক নিচ্ছে না। অথচ একটা গাছ কাটার জন্য কোর্ট থেকে ছোয়ামঠো দেওয়া হয়। কিন্তু লুঠেরেরা দেশ ধ্বংস করছে, সাধারণ মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এতে কারো মাথা ব্যাথা নাই। মনে হয় কর্তা ব্যক্তিরা নেশায় ভুত হয়ে আছে। ক্ষমতার লোভে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। ভুলে গেলে চলবে না, আল্লাহ্র কোরআন এবং রাসুলের হাদিস চিরন্তন সত্য। তোমরা খুবই শীঘ্রই গজবে প্রথিত হবে। মানুষের বরদোয়া থেকে রক্ষা পাবে না।
বর্তমানে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলির পাওনা ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলে কোন জিনিস বাংলাদেশে নাই। সবকিছুই হল দুর্নীতিবাজ এবং লুটেরাদের আখড়া। অনেকগুলি ব্যাংকের অবস্থা খুবই করুণ। দৈনন্দিন টাকা পয়সা লেনদেনের সক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি মূলধনের টাকাও তারা আত্মসাৎ করে ফেলেছে।
৯৭ শতাংশ ঔষধের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। দেশে ঔষধের বাজার ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের মানুষ মনের কষ্টে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫৪০টি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অজানা আরও কত লক্ষ আছে তার হিসেব নাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল, গত ১০ বছরে প্রাণহানি ৭৮ হাজার। দুর্ঘটনা রোধ কল্পে, মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং নিষিদ্ধ যান চলাচল বন্ধ করা খুবই জরুরী। সীমান্ত হত্যা সীমা অতিক্রম করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফরে আসেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি আদৌ গুরুত্ব পায় নাই।
৩। শিক্ষা ব্যবস্থা : বাংলাদেশে শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলমান। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে অন্যান্য ধর্মের জনগণের নিরাপত্তা এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা। মুসলমানদের ধর্মীয় আকিদা মেনে শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা একান্ত বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কিছু বিশেষ পদভ্রষ্ট তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিয়েছে। নতুন পাঠ্যপুস্তকে ১৪৭টি ভুল রয়েছে। দায়ী কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের কোন জবাবদিহিতা করার প্রয়োজনীয়তা নাই। কারণ তারা বাকশালী শাসনের দোসর। তাদের হাত থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে। বিদেশী বাদ্য বাজনা ও সংস্কৃতি ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বর্তমানে বিয়ে-সাদী হচ্ছে হিন্দি সিনেমার কায়দায়, আর বড় লোকদের টাকার খেলা। অন্যদিকে গরীবদের মরণ ফাঁদ। কারণ বড় লোকদের বিয়ে-সাদীর কারণে মাংস, মুরগীর দাম বেড়েই চলেছে। গরীবদের জন্য মাংস, মুরগী এবং মাছ খাওয়া একটা দুঃস্বপ্ন। জেনে শুনে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে দোযকে যেতে হবে।
৪। নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। অন্যথায় ঈমান থাকবে না। এছাড়াও প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যতে লুঠেরেরা, লম্পটেরা, দুর্নীতিবাজরা এবং আল্লাহ্কে অমান্যকারীরা দেশ পরিচালনা করবে। এটা কখনও দেশের জনগণের গ্রহণ করা উচিত হবে না। সদাসর্বদা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পদভ্রষ্ঠ হলে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে গজব আরও ভয়ানক হবে। আমাদের কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ্কে রাজি করানোই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। সরকার এবং সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু লোক রাতারাতি বড় লোক হওয়ার নেশায় মত্ত। ঈদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষভাবে ঢাকা মহানগরের তথাকথিত অভিজাত এলাকাগুলিতে নাইট ক্লাবের নামে অনৈতিক ও ইসলাম ধর্ম পরিপন্থী কর্মকাÐ প্রতিদিন রাত্রিবেলা সংঘঠিত হচ্ছে। তারা পদভ্রষ্ঠ হওয়ার কারণে এই ধরণের ঘটনা সংঘঠিত হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নিজ নিজ ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণই হচ্ছে এই অধঃপতনের অন্যতম কারণ। লোভ লালসা আমাদেরকে বিপদগামী করেছে। দেশ এবং জনগণকে অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর পরিণাম কিন্তু ভয়ানক। একটু চিন্তা করুন, সঠিক পথে চলার পদক্ষেপ নিন। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নাই, তারা সুচিন্তিতভাবে সমাজকে কলুসিত এবং সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। সুচিন্তিতভাবে ছেলে মেয়েদের বই পুস্তুকে কিছু কিছু ইসলাম ধর্ম পরিপন্থী আপত্তিকর বিষয় সংযোজন করে নতুন প্রজন্মকে ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইসলাম ধর্ম হল, শান্তি এবং সাম্যের ধর্ম। অবশেষে আল্লাহ্র হুকুমে তারাই ধ্বংস হবে। ইসলাম ধর্ম কাউকে বিদ্বেষ ও অন্যায় কাজের শিক্ষা দেয় না। অপরের ক্ষতি করা এবং অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার ব্যাপারে বার বার কোরআনে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রকারীরা কখনও সফল হবে না।
৫। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লক্ষ ৯০ হাজার। গত বছর যা ছিল ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার। অর্থাৎ ১ বছরের ব্যবধানে ১ লক্ষ ২০ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে সুশিক্ষার অভাবে হাজার হাজার ছেলে মেয়েরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশ ক্রমশ মেধা শূন্য হয়ে পড়ছে। যা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য, কারণ যুব সমাজ সঠিক পথে থাকলে সুশিক্ষিত হলে লুটেরেরা কখনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
৬। দেশে দরিদ্রের সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোন অস্তিত্ব নাই। বেকারত্ব, শিক্ষার সমস্যা, স্বাস্থ্যের সমস্যা এবং নিত্য পণ্যের মূল্য দেশের প্রায় ১০-১২ কোটি মানুষের নাগালের বাহিরে। দরিদ্র মানুষের খাবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। মানুষ বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন নাই।
৭। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ- ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আমরা কোন নদী থেকে পানির ন্যায্য অংশ পাচ্ছি না। ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে দিয়ে দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা এবং তিস্তা নদীতেও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ১৯৭৬ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভারতের তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রামের সাথে বৈঠক করে গঙ্গার পানি বন্টনের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং ঐ চুক্তিতে লেখা ছিল, ভারত বাংলাদেশকে ৩২ হাজার কিউসেক পানি রিলিজ করবে এবং ঐ পানি গঙ্গা বাঁধের উপরে যেন মজুত থাকে তা নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ ঐ চুক্তিতে একটা গ্যারান্টি ক্লজ সন্নিবেশ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে এরশাদ আমলে গ্যারান্টি ক্লজ উঠিয়ে দিয়ে ৩২ হাজার কিউসেক এর স্থলে ২৮ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহের চুক্তি হয়। যা বর্তমান সরকারের আমলে আরো হ্রাস পেয়েছে। ফলে সমগ্র দেশে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিম্নে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু উত্তপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এছাড়াও পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ভারতের তৈরি খাদ্যদ্রব্য এবং ব্যবহারিক সামগ্রীগুলিতে স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকার অনেকগুলি পদার্থ মিশানো থাকে। যার ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ লোক ঐ সমস্ত রোগের চিকিৎসার জন্য ভারতের হাসপাতালগুলিতে ভিড় জমায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীব মানুষের ছেলে মেয়েরা বিদেশ গমন করে বহু কষ্টার্জিত ডলার দেশে প্রেরণ করে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঐ ডলারগুলি ভারতে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এছাড়াও বাংলাদেশে অবৈধভাবে ভারতের ১০ লক্ষাধিক লোক ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকরি করছে। এদের অনেকে বাংলাদেশ সরকারকে কোন ধরণের করও দেয় না। আমাদের নাগরিকরা বিদেশ থেকে যে ডলার অর্জন করে তার সিংহভাগ ভারতের অবৈধ নাগরিকরা বৈধ এবং অবৈধ পথে তাদের নিজ দেশে নিয়ে যায়। রেমিটেন্সের দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতের জন্য ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারত সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী। আমি নিজে শুনেছি, কয়েকদিন পূর্বে ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা পাকিস্তানকে দুই টুকরা করে তাদেরকে দূর্বল করে দিয়েছি। তার এই বক্তব্যে সুস্পষ্ঠ বুঝা যায়, বাংলাদেশের জনগণ তাদের বন্ধু নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৯৪৭ সালের পর উপমহাদেশ ত্যাগ করে নিজ দেশে ফিরে যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ভারত সরকার বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুরূপ দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোন বিরূপ মন্তব্য নাই। এছাড়াও অন্যের ক্ষতি করা ইসলাম ধর্ম পরিপন্থী একটি কাজ।
আমরা জানি, ভারত সরকার তাদের পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই, আমরা অন্য কোন দেশের কোন ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না, অন্য দেশের কোন ক্ষতি হউক এই ধরণের কর্মকন্ডে লিপ্ত হতে চাই না। কারণ এই ধরণের কর্মকাÐ ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভারত সরকার কোন বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনযোগী হবে। আসুন আমরা একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করি। ভাল প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করি। এতেই সকলের মঙ্গল নিহিত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ প্রায় ১৮ কোটি। ভরত সরকারের উচিত হবে না বাংলাদেশের জনগণের সাথে শত্রæতামূলক আচরণ করা। আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই। বর্তমান সরকার আপনাদেরকে আমাদের দেশের সমুদ্র বন্দর, স্থল বন্দর এবং বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অনেকগুলি অসম চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারপরও কেন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, তা বোধগম্য নয়। মেহেরবাণী করে, আমাদেরকে আমাদের মত করে থাকতে দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। ভারত সরকারের বর্তমান মনোভাব পরিবর্তন না হলে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা অনাক্ষাংকিত ও অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের মানুষ অকৃতজ্ঞ নয়।
প্রিয় দেশবাসী,
এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা হারাবে। ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিককে জেগে উঠতে হবে। অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশে গণতন্ত্র এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলির উপরে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকলে সকলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমাদের সম্মূখে অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন- গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যুগোপযোগি করতে হবে। বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশীদের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে হবে। কৃষকের জন্য সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু একশ্রেণীর মানুষ সরকারের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে, আর সমাজের ৯০ শতাংশ মানুষ তার খেসারত দেবে, তা হয় না। অদক্ষ লোকদের দিয়ে দেশের কখনও মঙ্গল হবে না। প্রয়োজন সুশিক্ষিত, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, ন্যায় পরায়ণ এবং ধার্মিক লোক। তাহলেই সমাজের মুক্তি আসবে।
বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়তো নিয়ন্ত্রণের বাহিরেও চলে যেতে পারে। আমাদের সকলের উচিত, দেশের সমস্যাগুলি পর্যালোচনা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব এইগুলির সমাধান বের করা। অন্যথায় আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হব। মনে রাখতে হবে, লোভ এবং মোহ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপি’র নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরতিহীন আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আপনারা এখনও অনেকে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন। আশা করি, দেশে গণতন্ত্র এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষক, শ্রমিক, যুবক এবং ছাত্র সমাজ সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসবে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএনপি’র নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচী ইনশাআল্লাহ্ ঘোষণা করব। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হউন। প্রস্তুতি গ্রহন করুন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ্ এই বাকশালী সরকারের পতন হবে। দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড.নেয়ামূল বশির,ড.আওরঙ্গজেব বেলাল,অধ্যক্ষ কে কিউ স্যাকলায়েন,ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।