ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহ জেলার সবকটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ময়মনসিংহ সদরকে। চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদরে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই জমজমাট প্রচার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উপায়ে প্রচার ছাড়াও মতবিনিময় ও ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকার তুলে ধরছেন। স্থানীয় ভোটাররাও বেশ আগ্রহী এই নির্বাচন নিয়ে। ফলে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে।
গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে উপজেলাটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন।
তবে এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দকৃত প্রতীক নিয়ে চেয়ারমযান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫জন। এদের মধ্যে সদ্য বিদায়ী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন (ঘোড়া),ধর্মমন্ত্রীর সাবেক এপিএস সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু সাঈদ (দোয়াত কলম),সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন আলভী (আনারস),হোসাইন নূর মোহাম্মদ আনির (মোটরসাইকেল),মনিরুজ্জামান (জোড়া ফুল)।
তবে এই পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে সদ্য বিদায়ী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন (ঘোড়া),ধর্মমন্ত্রীর সাবেক এপিএস সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু সাঈদ (দোয়াত কলম),সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন আলভী (আনারস), প্রতীক নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন উপজেলাবাসী।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নে যদিও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন এর ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পুণরায় চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন এমনটাই প্রত্যেকের মুখে মুখে। অপরদিকে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব আবু সাঈদ সাবেক ধর্মমন্ত্রীর এপিএস ও বর্তমান সাংসদের আস্থাভাজন হওয়ায় ভোট যাই হউক ফলাফল দোয়াত কলমের পক্ষে যাবে এমন মন্তব্যও চলছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে। অপর প্রার্থী আল আমিন আলভী এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও তীর্ণ মুলে তার ব্যাপক পরিচিতি থাকায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষেও ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যে কারণে আলভির আনারসের গাজোয়ারে স্বস্তিতে নেই ঘোড়া ও দোয়াত কলম। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে আশরাফ এর শক্তিশালী অবস্থানের পাশাপাশি বিশাল কর্মীবাহিনী, উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা আশরাফ এর পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও আশরাফ হোসাইন ও আবু সাঈদ দুজনের মাঝে রাজনৈতিক লবিং গ্রুপিং থাকায় বেশ সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন আল আমিন আলভী (আনারস)। এদের মধ্যে আশরাফ হোসাইন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের অনুসারী ও আলহাজ্ব আবু সাঈদ বর্তমান সাংসদের অনুসারী।
এ ছাড়া জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাই ঘোড়া প্রতীকে প্রার্থী আশরাফ হোসাইন এর পক্ষে কাজ করছেন। দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব আবু সাঈদ এর পক্ষে হাতেগোনা কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা কাজ করছেন এবং প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। যারা বর্তমান সাংসদের অনুসারী। তাই রাজনৈতিকভাবেও সুবিধাজনক স্থানে আছেন আল আমিন আলভী। তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন সাধারণ পাবলিক।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলভী বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। যারা আমাকে ভালোবাসে তারাই আমার পক্ষে কাজ করতে মাঠে নেমেছেন। আনারস প্রতীকের জোয়ার উঠেছে।প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দিতে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে। আশা করি, সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হব।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, সারা দেশের সঙ্গে তুলনা করলে উন্নয়নে ময়মনসিংহ সদর পিছিয়ে আছে। প্রথমেই সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করব। ইউনিয়নগুলোর সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাত ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিব। তৃণমূল মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন করছি তাই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, ভোটাররাও উৎফুল্লু। আমি নির্বাচিত হলে ময়মনসিংহ সদরের পুরো উন্নয়নে কাজ করব।
তবে ৫ জনের মাঝে ৩ প্রার্থীকেই ওজনদার হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা। উপজেলার কয়েক এলাকার ভোটাররা বলেন, তিনজনই বেশ শক্ত প্রার্থী। সুষ্ঠু ভোট হলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সচেতন নাগরিকরা মার্কা নয়, প্রার্থী দেখেই ভোট দিবে।