বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দিলে বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান হবে?
রিপোর্টারের নাম :
-
আপডেটের সময় :
শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪
-
১১১
টাইম ভিউ :
বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দিলে বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান হবে?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নদী হলো গঙ্গা। যা বাংলাদেশে প্রবেশের পর পদ্মা নাম ধারণ করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই নদীর এক পাশে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, অপর পাশে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা। মুর্শিদাবাদ জেলারই ছোট্ট একটি পৌর শহর ফারাক্কা। আর এই ফারাক্কাতেই রয়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা ফারাক্কা বাঁধ। গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত এই বাঁধের মাধ্যমে; গ্রীষ্মকালে ভারত পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের পদ্মা অববাহিকাকে পরিণত করে মরুভূমিতে আর বর্ষাকালে বাঁধের গেট খুলে ভাসিয়ে দেয় বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল।
বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দিলে বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান হবে?
ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে চালানো ভারতের পানি আগ্রাসন রুখে দিতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশেও ফারাক্কা বাঁধের বিপরীতে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন আসলেই কি বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দিলে বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান হবে?
ফারাক্কা বাদ নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গা নদীর পানি একটি কৃত্রিম খালের মধ্য দিয়ে পরিবহন করে হুগলি ভাগিরতি নদীতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা সংকট দূর করা।
ফারাক্কা থেকে কলকাতা বন্ধরের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
ফারাক্কা বাঁধ থেকে যে কৃত্রিম খালের মাধ্যমে হুগলি বাগিরতি নদীতে পানি পরিবহন করা হয় ।
সেই কৃত্রিম খালের দৈর্ঘ্য প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার ।
এইদরনের অপরি নাম ধরছি গ্রহণ করা হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় ।
ভারতেরই বহু পরিবেশ অধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে।
অববাহিকা ভিত্তিক পানি বন্টনের ক্ষেত্রে প্রথমেই বিজ্ঞান তারপর অর্থনীতি এবং সবশেষে রাজনীতিকে বিবেচনায় নিলে পানি বন্টনের এটি অনেক বেশি কার্যকর হত।
কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্থূল বুদ্ধি দিয়ে গায়ের জোরে ভারত পানি আটকে রাখে।
এতে ভারতের ক্ষতি হলেও তবুও তারা বাংলাদেশকে পানি দিবে না।
শুধুমাত্র এই ধরনের মানসিকতার কারণেই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়েছে।
তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে কলকাতা বন্দরকে টিকিয়ে রাখার জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিগত ৫০ বছর ধরে ফারাক্কা বাঁধের পানি কলকাতা বন্দরে প্রবাহিত করেও সেই কলকাতা বন্দরকেই বাঁচানো যায়নি।
এমনকি কলকাতা বন্দর সচল রাখতে বর্তমানে যে পরিমাণ ড্রেসিং করতে হয়। ফারাক্কা বাঁধ চালু করার আগেও এতটা ড্রেসিং দরকার হতো না।
তার মানে যে উদ্দেশ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল এটি তার আসল উদ্দেশ্য পূরণেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
তবে ফারাক্কা শুধুমাত্র একটি বাঁধি নয় এই অবকাঠামোটি সড়ক ও রেল যোগাযোগ সেতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এবং ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও এই বাঁধ থেকে জল সরবরাহ করা হয়।
ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল সেই পাকিস্তান আমলে ।
কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ১৯৫১ সালে ভারত সরকার এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল।
১৯৬১ সালে ভারত ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করার পর।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়
এরপর ভারত গোপনে গোপনে অত্যন্ত ধীরগতিতে এই বাঁধের কাজ এগিয়ে নিতে থাকে।
এবং ১৯৭৪ সালের মধ্যে ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বন্টন বিষয়ে আলোচনা করেন।
কিন্তু ফারাক্কা থেকে যে কৃত্রিম খালের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরে পানি পৌঁছানো হবে সেই খালটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য।
ভারত বাংলাদেশের কাছে সাময়িক অনুমতি চায় ভারত বলে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৪১ দিনের জন্য তারা পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এরপর ৪১ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও ভারতের সেই ৪১ দিনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি।
কৃত্রিম খালটি পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতকে ৩১০ থেকে ৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণ করার অনুমতি দিয়েছিল।
কিন্তু ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত।
১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে।পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী হুগলি নদীতে প্রবাহিত করে।
বাংলাদেশের সাথে করা ভারতের এ ধরনের অন্যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা করা হলেও বিষয়টি ভারত খুব একটা পরোয়া করেনি।
এর পর ১৯৭৮,৮২,৮৫ ও ৯২ সালে স্বল্প মেয়াদী পানি বন্টন চুক্তি হলেও।
কোন বাড়ি ভারত তার কথামতো কাজ করেনি।
ভারত বরাবরই অন্যায় ভাবে চুক্তির শর্তগুলো ভঙ্গ করেছে।
ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের আড়াই হাজার কিলোমিটার নদীপথ সম্পূর্ণ নাব্রতা হারিয়ে। সেই সাথে এই অঞ্চলের ৪৯টিশাখা নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে।শুধুমাত্র ফারাক্কা বাঁধের কারণেই গঙ্গার উজানে বিহার ও উত্তর প্রদেশ এবং ঘাঁটিতেসুন্দরবন পর্যন্ত পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের সাথে মিথ্যা কথা বলে। সম্পূর্ণ প্রতারণার মাধ্যমে ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়েছিল।সুধীরঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। এই ভাদের কারণে আর্থিক মূল্যে।প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়।
গঙ্গা পদ্মা এটি আন্তর্জাতিক নদী।এই নদীর পানিতে উজানের দেশ হিসেবে ভারতের যেমন অধিকার আছে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ততটুকুই অধিকার রয়েছে।কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো খবর