এদিকে এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, গৃহবধূর গলায় লাগা ওই গুলি কার উদ্দেশে ছোড়া হয়েছিল? এটা কি অস্ত্রের মহড়া ছিল নাকি হত্যার উদ্দেশে গুলি ছোড়া হয়েছিল, এই নিয়ে চলছে আলোচনা।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, ওই নারীর গলায় বুলেটের অস্তিত্ব মিলেছে। বুলেটের আঘাতে তার দাঁত ও জিহ্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জটিল এই অপারেশন এখানে সম্ভব না হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ভুক্তভোগীর ছোট ছেলে জাকির হোসেন জানান, বুলেট অপসারণ করতে চিকিৎসকরা ২/৩ দিনের মধ্যে অপারেশন করার কথা বলেছেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, ওই নারীর গলায় বুলেট পাওয়া গেছে। তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি গুলিবর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, তিন ছেলে সন্তানের মা জুলেখা খাতুন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি উপজেলার কৈগাড়ি সিও অফিস এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ছেলে ইজিবাইক চালক জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ও তার ছেলে জাকির হোসেন সিএনজি অটোরিকশায় গ্রামের বাড়ি থেকে কৈগাড়ির বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের ফাঁকা এলাকায় পৌঁছালে তিনি বাম ঠোঁটে শক্ত কিছুর আঘাত পান। এত রক্তাক্ত জখম হন, তার দাঁত ও জিহ্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছেলে জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে মায়ের সঙ্গে অটোরিকশায় কৈগাড়ি সিও অফিস এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বীরগ্রাম ফাঁকা মহাসড়কে পৌঁছেন। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা কয়েকজন তাদের অটোরিকশা অতিক্রম করছিল। একপর্যায়ে একটি মোটরসাইকেল তাদের কাছে আসে। এ সময় শব্দ হলে তার মা জুলেখা খাতুনের নিচের ঠোঁট রক্তাক্ত জখম হয় এবং একটি দাঁত ভেঙে যায়। তবে তিনি বা তার মা এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। কারণ কারও সঙ্গে তাদের শত্রুতা নেই। তার ধারণা, দুর্বৃত্তদের লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি তার মায়ের মুখে আঘাত করেছে। অল্পের জন্য মা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
তবে এলাকাবাসীর ধারণা, আগামী ২৯ মে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মহড়া দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি বেরিয়ে যায়। আর এ গুলি ওই নারীর মুখে লেগেছে। আবার কেউ বলছেন, নিজেদের মধ্যে বিরোধে প্রতিপক্ষের দিকে গুলি করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ওই নারীর মুখে বিদ্ধ হয়। যদিও এই বিষয়ে পুলিশ তদন্ত ছাড়া আগাম কিছু বলতে রাজি নয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৪ মে শাজাহানপুর উপজেলার বিহিগ্রাম কৃষি কলেজের সামনে দুর্বৃত্তরা চলন্ত অটোরিকশার গতিরোধ করে গুলি চালালে মোজাফফর হোসেন ওরফে বাবা হুজুর (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়া দিতেন। শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকায় দারুল হেদায়া কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে শহরের কারবালা এলাকায় বসবাস করতেন। ওই দিন বাবা হুজুর নাটোরের সিংড়ার বাড়ি থেকে অটোরিকশায় শহরে ফিরছিলেন। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে পারেনি। এ অবস্থায় আজ এক গৃহবধূ ‘গুলিবিদ্ধ’ হওয়ার অভিযোগ তোলায় আবারও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।