মার্কিন একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ভয়াবহ ওই ঘটনাটি গত বছরের জুনের। আমেরিকার ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ক্রিস্টেল ক্যানডেলারিও গত বছরের জুনে ১৬ মাসের শিশু সন্তান জাইলিনকে বাড়িতে একা রেখে ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটাতে ডেট্রয়েট এবং পুয়ের্তো রিকোতে যান। ফিরে আসেন ১০ দিন পর।
১০ দিন পর বাড়ি ফিরে আসেন ওই নারী। তখন তিনি ৯১১ জরুরি সেবা নম্বরে কল করে পুলিশকে খবর দেন। এ সময় তিনি জানান, তাঁর বাচ্চা মারা যাচ্ছে, সাহায্য প্রয়োজন। পুলিশ এসে শিশু জাইলিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে চিকিৎসকেরা জানান, আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে ঘটনাটি শেয়ার করে ওই নারীকে ধিক্কার জানিয়েছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন মনে করা হয় যেই মাকে, সেই মা কীভাবে এমনটা করতে পারেন এমন প্রশ্নও উঠেছে। ওই নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ক্রিস্টেল ক্যানডেলারিও ছুটি কাটানোর বিষয়টি জানতে পারে। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার সহকারী প্রসিকিউটর অ্যানা ফ্যারাগিলা একটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখান। এতে দেখা যায় ৬ জুন ক্রিস্টেল বাড়ি থেকে স্যুটকেস নিয়ে বের হন। আর ১৬ জুন তিনি ফিরে আসের। ফেরার কয়েক মিনিট পর ৯১১-এ কল করেন।
ফারাগলিয়া বলেন, ‘জাইলিনকে মলমূত্র মাখা অবস্থায় একটি ম্যাট্রেসে ওপর পাওয়া যায়। পশুরাও তাদের বাচ্চাদের এর থেকে ভালোভাবে যত্নে রাখে।’
বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বাচ্চাটির জন্য পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা রেখে যাননি ক্রিস্টেল। মাত্র কয়েক বোতল দুধ রেখে গিয়েছিলেন। অতটুকু বাচ্চা পানি ও খাবার না পেয়ে কয়েক দিনের মধ্যে মারা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনাটি গত বছর জুনের হলেও তদন্তের পর গত মার্চ মাসে সাজা ঘোষণা করা হয়। সাজা ঘোষণার সময় ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি কাউন্টি আদালতের বিচারক ব্রেনডন শিহান এ ঘটনাকে ‘চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেন। ক্রিস্টেলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি যেমন আপনার ছোট্ট শিশুকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি দেননি, তেমন আপনাকেও বাকি জীবন বন্দী অবস্থায় কাটাতে হবে। তবে পার্থক্য হলো, কারাগারে অন্তত আপনি খাবার এবং পানি পাবেন, কিন্তু শিশুটি তা পায়নি।’
এই মামলার শুনানিতে ক্রিস্টেল দাবি করেন, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ক্রিস্টেল আদালতকে বলেন, ‘জাইলিনকে হারিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। কিস্তু আমিই একমাত্র জানি, কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। সৃষ্টিকর্তা এবং জাইলিন আমাকে ক্ষমা করেছে বলে আমার বিশ্বাস।’ যদিও ক্রিস্টেলের কোনো কথাই বিচারকের মনে দাগ কাটতে পারেনি। তাঁর শাস্তি বহাল রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।