আসলে মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসবাস ঠিক কতটা নিরাপদ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। হুবহু মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশ ও পরিস্থিতির মতো নতুন এক কৃত্রিম অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে নাসার নিজস্ব জনসন স্পেস সেন্টারে। যা নিয়ে এবার ব্যাপকভাবে গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে তারা।
আমাদের সোলার সিস্টেমের রুক্ষ ও শীতল লাল মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের অনুরূপ এই কৃত্রিম অবকাঠামোতে নাসার পরিকল্পনা মাফিক ৪ জন মহাকাশচারী একটানা ৪৫ দিন অবস্থান করবেন। এ কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে নভোচারী পাঠানো হলে তারা আসলে সেখানে কীভাবে টিকে থাকবে এবং কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে তা নিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করা।
এ জন্য অনেক আগেই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের অনুরূপ এক কৃত্রিম অবকাঠামো তৈরি করে নাসা। সেখানে আসন্ন ১০ই মে থেকে আগামী ২৪শে জুন পর্যন্ত চারজন নভোচারী একেবারে একটানা ৪৫ দিন বাহিরের কোন রকম সাহায্য এবং সুযোগ সুবিধা ছাড়াই অবস্থান করবেন। এটাকে তাদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সাথে প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়া হবে। তারা কৃত্রিমভাবে তৈরি মঙ্গলগ্রহের অতি শীতল, অনুর্বর ও রুক্ষ পরিবেশের তাদের মিশন সম্পন্ন করবেন। তারা সেখানে নাসার নির্ধারিত স্পেসসুট পরে অবস্থান করবেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ও পরিকল্পিত কাজ চালিয়ে যাবেন।
তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও মঙ্গলগ্রহে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে ঠিক সেভাবেই যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। এ জন্য সব ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে নাসা। মিশন চলাকালীন সময়ে মহাকাশচারীরা বাহিরে থেকে সরাসরি কোন সহযোগিতা পাবেন না। তবে পরিকল্পনা মাফিক আর্টিফিশিয়াল মার্স মিশন শেষে আগামী ২৪শে জুন তাদের মূল পৃথিবীর বুকে ফিরিয়ে আনা হবে।
নাসা বর্তমানে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী হলেও বাস্তবে বিশ্বের কোন দেশই এখনো পর্যন্ত তিন কিংবা চারজন নভোচারী নিয়ে নিরাপদে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার মতো কোন উচ্চ প্রযুক্তির স্পেসক্রাফট তৈরি তো দূরের কথা ডিজাইন করাটাই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। মহাকাশে রোবট পাঠানো এবং মানুষ পাঠানো মোটেও একই বিষয় নয়। তাছাড়া পৃথিবী থেকে মঙ্গলের বুকে পৌঁছাতে স্পেসক্রাফটের প্রায় ৭ মাস সময় লাগে।
তাছাড়া এই দীর্ঘ সময় স্পেসক্রাফটে মহাকাশচারীদের অবস্থান করা এবং এর পাশাপাশি খাদ্য, অক্সিজেন ব্যবস্থা করাটাও কিন্তু সহজ কোন বিষয় নয়। আবার বাস্তবে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানোর পর অতি শীতল -৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নভোচারীরা টিকে থাকার পাশাপাশি মহাজাগতিক চাপ ও উচ্চ মাত্রায় ক্ষতিকর রেডিয়েশন মোকাবেলা করে সুদীর্ঘ সময়ে নভোচারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখাটাও একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
তথ্যসূত্র : নাসা